বিশেষ সংবাদদাতা,কলকাতা: দীপাবলি মানে আলোর উৎসব। কালীপুজোর রাতে সেই দীপাবলি পালন করে পশ্চিমবাংলার আপামর বাঙালি। আলো জ্বালানো হয়, বাজি পোড়ানো হয়। সেই সঙ্গে অমাবস্যার রাতে হয় কালীপুজো। কিন্তু এবার করোনা পরিস্থিতিতে এ ব্যাপারে হাইকোর্ট পরিষ্কার জানিয়ে দিয়েছে, কালীপুজোর রাতে কোনও ভাবে বাজি পোড়ানো যাবে না। ওইদিন বাজি পোড়ানো পুরোপুরি নিষিদ্ধ। এমনকী, কালীপুজো, জগদ্ধাত্রী পুজো এবং কার্তিক পুজোর বিসর্জনেও ফাটানো যাবে না কোনও বাজি। পাশাপাশি বাংলার বিভিন্ন প্রান্তে বাজি বিক্রি বন্ধ করার দায়িত্ব কড়া ভাবে পালন করতে পুলিশকেও নির্দেশ দিয়েছে।
কোভিড পরিস্থিতিতে বাজি পোড়ানো হলে তার ধোঁয়ায় করোনা সংক্রমিতদের কষ্ট হতে পারে। তাই চিকিৎসক মহলের তরফে রাজ্যে বাজি নিষিদ্ধ করার দাবি জানানো হয়েছিল আগেই। তখন এ ব্যাপারে রাজ্য সরকার কোনও মতামত জানায়নি। যদিও পরিবেশবিদরা চিকিৎসক মহলের দাবিকে সমর্থন করেছিল। এদিকে, দুর্গাপুজোয় বিধিনিষেধ জারি করে ভিড় কমিয়ে দিয়ে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে কলকাতা হাইকোর্ট। ফলে করোনা সংক্রমণ মাত্রাতিরিক্ত বেড়ে যাওয়ার যে আশঙ্কা অনেকে করেছিলেন, বাস্তবে তা হয়নি। অনেকেই সেজন্য হাইকোর্টকে পুরোপুরি কৃতিত্ব দিয়েছেন। সেই পরিপ্রেক্ষিতে কালীপুজোয় যাতে বাজি পোড়ানো না হয় এবং ভিড় নিয়ন্ত্রণ করা হয়, সেইজন্য হাইকোর্টে একটি মামলা হয়। বিচাপরতি সঞ্জীব বন্দ্যোপাধ্যায় এবং অরিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়ের ডিভিশন বেঞ্চ সমস্ত দিক খতিয়ে দেখে জানিয়ে দেয়, কালীপুজোয় রাজ্যে বাজি পোড়ানো যাবে না। এমনকী, বাজি বিক্রিও করা যাবে না। এ ব্যাপারে রাজ্যের পুলিশ ও প্রশাসনকে যথেষ্ট কঠোর থাকতে হবে।
শুধু তাই নয়, পুজো মণ্ডপগুলিতে দর্শনার্থীদের প্রবেশের ক্ষেত্রেও কলকাতা হাইকোর্টের তরফে দুর্গাপুজোর মতোই বিধিনিষেধ জারি করা হয়েছে। মণ্ডপের ৫ মিটার দূরে ব্যারিকেড করে দিতে হবে পুজোকর্তাদের। ৩০০ বর্গ মিটারের বড় মণ্ডপের ক্ষেত্রে পুজো কমিটির সর্বোচ্চ ৪৫ জন এবং ছোট মণ্ডপগুলিতে সর্বোচ্চ ১৫ জন প্রবেশ করতে পারবেন। তবে বিহারিদের ছটপুজো নিয়ে এদিন হাইকোর্ট কোনও মন্তব্য করেনি। ছটপুজোগুলিতেও রাজ্যের নদীগুলি–সহ বিভিন্ন জলাশয় প্রচুর ভিড় হয়। ফলে নদী, জলাশয়গুলি দূষিত হয়। এ ব্যাপারে অনেকদিন ধরেই পরিবেশবিদরা আপত্তি জানিয়ে আসছিলেন। রাজ্য সরকার পরিবেশবিদদের কথায় সায় দিলেও বাস্তব ক্ষেত্রে ছটপুজোয় নদী বা জলাশয়গুলিতে প্রবেশ রোধে কড়া কোনও ব্যবস্থা নেয়নি। বিষয়টি নিয়ে অনেকেই উষ্মা প্রকাশ করলেও রাজ্য সরকার তাতে কান দেয়নি। তবে আগামী ১০ নভেম্বর এই মামলার পরবর্তী শুনানি হবে। সেই দিনই এ ব্যাপারে হাইকোর্ট তাদের মতামত জানিয়ে দিতে পারে।